খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ পৌষ, ১৪৩১ | ১ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুথানের ঘোষণাপত্র দিতে হবে : হাসনাত
  স্বাগত ২০২৫; নতুন বছর বরণে দেশজুড়ে নানা আয়োজন

ভোমরা দিয়ে দেড় মাসে ৫৯ হাজার মে. টন চাল আমদানি, তবুও বাড়ছে দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

দেশের ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চাল আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। গত দেড়মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৫৯ হাজার ৬৫ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হলেও সাতক্ষীরার বাজারে দামের উপর কোন প্রভাব পড়েনি। বরং গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাতক্ষীরার বাজারে প্রকারভেদে প্রত্যেকটি চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে নিম্ম আয়ের মানুষসহ সাধারণ ক্রেতারা।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে ২৮ জাতের যে চালের দাম কেজিতে ৬২-৬৪ টাকা ছিল, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাক দরে। একই ভাবে ৪৮-৫০ টাকার মোটা চাল ৫২-৫৪ টাকা, ৬৭-৬৮ টাকার মিনিকেট ৭২-৭৩ এবং ৮০ টাকার বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাক কেজি দরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাস দুয়েক আগে থেকে দেশে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের অন্যান্য স্থল বন্দরের ন্যায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। দেশের ৯২টি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৩ নভেম্বর থেকে চাল আমদানি শুরু করে। এরপর ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬২০ টি গাড়ীতে ভারত থেকে ৫৯ হাজার ৬৫ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকারের চাল আমদানি হয়। তারপরও বাজারে কমেনি দাম। বরং কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। চালের দাম না কমার পেছনে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দুষছেন।

বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা জানান, দেশের প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১৪৪টি গাড়িতে ভারত থেকে ৪১ হাজার ৯৯৭ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি করে।

সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ি আনোয়ার হোসেন জানান, ভারতীয় আমদানিকৃত চাল আসার পরও বাজারে দেশী জাতের বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। এক একসপ্তাহ ধরে চালের বাজার বাড়তি। বর্তমানে মোটা চাল প্রকারভেদে ৫২-৫৪ টাকা, ২৮ চাল ৬৬-৬৮ টাক, মিনিকেট ৭২-৭৩ টাকা ও বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাক কেজি দরে। গত একসপ্তাহ আগে এসব চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা কম ছিল। আমরা পাইকারি বাজার থেকে চাল কিনে এনে কেজিতে ১-২ টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে দাম বাড়ায় আমরা ক্রেতাদের কাছে কৈফিয়াত দিতে পারছিনা। অনেকে চাল কিনতে এসে ঝগড়াও করছেন। কিন্তু আমাদেরতো কিচু করার নেই। কেনার উপর সামান্য লাভে আমরা চাল বিক্রি করে থাকি।

এদিকে সুলতানপুর বড় বাজারে চাল কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মাসিক আয়ের বড় অংশ খাবার কিনতে ব্যয় হচ্ছে। সপ্তাহর ব্যবধানে প্রতিটি চালের দাম কেজিতে ৪/৫ টাক বেড়েছে। বাজারে সবজির দাম কমলেও বাড়ছে চালের দাম। ভারত থেকে প্রচুর পরিমান চল আমদানির পরও বাজারে তার কোন প্রভাব পড়ছে না বরং দিনে দিনে দাম আরো বাড়ছে। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শহরের পলাশপোল এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুনছি ভারত থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আসছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। চালের মূল্য এখনো অস্বাভাবিক। কোনো পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে না। বরং দাম আরো বাড়ছে। প্রতিটি চালের দম কেজিতে ৪/৫ টাকা বেড়েছে।

তবে বড় বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যাসহ নানা কারণে ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় চালের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি। মিল মালিকরা চালের দাম না কমালে আমরাও কমাতে পারবো না। ভারত থেকে আমদানি করা চাল ৫০ টাকার ওপরে কেনা পড়ছে। তাহলে পরিবহনসহ নানা খরচ যুক্ত করে কত টাকায় বিক্রি করবো?

মিল মালিক অব্দুল গফুর সরদার বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় আনুপাতিক হারে চালের দামও বেশি। এছাড়া ভারতীয় আমদানি করা চাল সব ক্রেতারা কিনছে না। বাজারে বর্তমানে যে পরিমাণ চাহিদা সে তুলনায় চালের আমদানিও কম। মজুত না বাড়লে বাজারে চালের দাম কমবে না।

ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু হাসান বলেন, ভোমরা বন্দর দিয়ে নিয়মিত চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চাল আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। তবে দেশের বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি ও স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে চালের দাম কমছে না। এজন্য প্রশাসনের বাজার মনিটরিং করতে হবে।

ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের এআরও রাসেল বলেন, শুরু থেকেই ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যহত আছে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১৬২০টি গাড়িতে ভারত থেকে ৫৯ হাজার ৬৫ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বও মাসের ১ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১১৪৪ গাড়িতে ৪১ হাজার ৯৯৭ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়। বন্দর খোলা থাকলে প্রায় প্রতিদিন ভারত থেকে চালের গাড়ি আসছে।

কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর থেকে ভারতের কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এ বন্দর ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে পণ্য পরিবহনে খরচ সাশ্রয় হয়। প্রায় প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে বড় পরিমাপের চালের চালান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!